Monday, February 28, 2022

Bengali Meaning of the Essay Freedom by George Bernard Shaw. / Freedom by George Bernard Shaw- এর বাংলা অর্থ ।



বঙ্গানুবাদঃ


স্বাধীনতা
জর্জ বার্নাড শ 

একজন সত্যিকারের স্বাধীন ব্যক্তি বলতে কী বোঝায়? তখনই একজন ব্যক্তি স্বাধীন হয় যখন সে স্থান-কাল বিষয় সাপেক্ষে যেটা পছন্দ করে সেটা সে তখনই করতে পারে অথবা তার কিছু করতে মন না গেলে কিছুই করে না। হ্যাঁ, এই প্রকার কোন মানুষই নেই এবং এই ধরনের কোন মানুষই হতে পারে না। আমরা পছন্দ করি বা না-ই করি আমরা আমাদের জীবদ্দশার এক তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিই—ধোয়াধুয়ি করতে এবং পোশাক পরা ও ছাড়তে বেশ কিছুক্ষণ—আমরা প্রায় দুঘণ্টা খেতে ও পান করতে ব্যয় করি—যাতায়াতেও কিছুক্ষণ আমরা এভাবেই সময়কে খরচ করি। আমরা প্রায় দিনের অর্ধেক সময় আমাদের প্রয়োজনের জন্য দাসত্ব করি অথচ আমরা হাজার অনুগত দাসের রাজা, যাদের কোন চাকর নেই স্ত্রী ছাড়া দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। স্ত্রীলোকেরা শিশুর জন্ম দেওয়ার মত অতিরিক্ত দাসত্বের কাজ নিশ্চিতভাবে করে পৃথিবীকে এখনও জনসংখ্যায়িত হতে দেয়।


ভয় বা আলস্যের কারণে এই স্বাভাবিক কাজগুলিকে এড়ানো যাবে না। কিন্তু তারা যুক্ত হতে পারে অন্য কাজগুলির সঙ্গে যেগুলির সঙ্গে তারা যুক্ত হতে পারেনি। যেহেতু আমরা খাই তাই আমাদের খাদ্যের জোগাড় করতে হয়। যেহেতু আমরা ঘুমোই তাই আমাদের বিছানা, খাট, ফায়ারপ্রেস, কয়লা প্রভৃতির দরকার হয়। আমরা যেহেতু রাস্তায় হাঁটি তাই আমাদের নগ্নতা ঢাকার জন্য পোশাক পরিচ্ছদের প্রয়োজন হয়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সবই মানুষের পরিশ্রমের দ্বারা তৈরী হয়। কিন্তু যখন তারা তৈরী হয় তখন তারা চুরি হতেও পারে। তুমি যদি মধু পছন্দ কর বা তোমার যদি মধুর প্রয়োজন হয় তবে মৌমাছিদের তাদের শ্রম দিয়ে আগে মধু তৈরী করতে দাও এবং তারপরে তাদের কাছ থেকে মধু চুরি কর, তুমি যদি খুবই কুঁড়ে হও এক জায়গা থেকে অন্য আরেক জায়গায় পায়ে পায়ে যেতে তখন তুমি একটি তুরঙ্গকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে পার এবং যা তুমি একটি ঘোড়া বা একটি মৌমাছির প্রতি করে থাক, তুমি তা করতে পার একটি পুরুষ বা একটি স্ত্রীলোক বা একটি শিশুর ক্ষেত্রেও। যদি তুমি তাদেরকে তোমার হয়ে খাটিয়ে নাও জোর করে বা ঠকিয়ে বা কোন কৌশলে অথবা তাদেরকে এই শিক্ষা দিয়ে যে তোমার কাছে তাদের স্বাধীনতা উৎসর্গ করা বা বলি দেওয়াই তাদের ধর্মীয় কর্তব্য।


সুতরাং সাবধান! তুমি যদি কাউকে বা একদল ব্যক্তিকে অনুমতি দাও তোমার ওপরে খবরদ্দারি বা মোড়লি ফলাতে, তাহলে দেখবে সে তার দাসত্বের সমস্ত কিছুই বর্তে দেবে প্রকৃতির কাছে এবং সেই ভারও চলে আসবে সরাসরি তোমার কাঁধে এবং তুমি দেখবে তুমি কাজ করে চলেছ দিনে আট থেকে বারো ঘণ্টা, তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য যে কাজটা তুমি অনায়াসেই অর্ধেক সময়ে বা তার চেয়েও কম সময়ে করে ফেলতে পার। সমস্ত সৎ সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত তোমাকে রক্ষা করা সমূহ ধ্বংসের হাত থেকে। কিন্তু আমি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সমস্ত প্রকৃত সরকারের উদ্দেশ্য হল এর বিপরীত। তারা তোমাকে দাসত্বে বাধ্য করে এবং তাকেই বলে স্বাধীনতা। তারা তোমার দাসত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে একটা নির্দিষ্ট সীমায় তোমার প্রভুদের লোভকে নিয়ন্ত্রিত করে। যখন এর অর্থ হয় দাসত্বের চেয়ে নিগ্রো ধরণের দ্রব্য দাসত্বের মূল্য বেশী হয় তখন তারা দ্রব্য দাসত্বকে মুছে ফেলে এবং তোমাকে স্বাধীন করে দেয় পছন্দ করার জন্য চাকরি বা প্রভুত্ব—এবং এটাকেই তারা বলে স্বাধীনতার জন্য একটি গৌরবময় জয়, যদিও এটা তোমার কাছে শুধুমাত্র একটা উপায়মাত্র। যখন তুমি অভিযোগ জানাও তখন তারা প্রতিজ্ঞা করে কয ভবিষ্যতে তুমি তোমার জন্য দেশ শাসন করবে। তারা প্রতিজ্ঞা পুনরুদ্ধার করে তোমাকে একটি ভোট দিয়ে এবং একটি সাধারণ নির্বাচন করে প্রতি পাঁচ বছরে।


নির্বাচনের সময়ে তাদের দুজন ধনী বন্ধু তোমার ভোটটি চায়, এবং তুমি তখন তোমার পছন্দের ব্যাপারে স্বাধীন—তাদের মধ্যে কাকে তুমি তোমার ভোটটি দেবে আরেকজনকে বাদ দিয়ে তোমার একটা পছন্দ যেটা তোমাকে আগের চেয়ে স্বাধীনতর করবে না এটা তোমার কাজের সময়ের এক মিনিটও কমাবে না। কিন্তু খবরের কাগজগুলি তোমাকে নিশ্চিত করে যে তোমার ভোটটি নির্বাচনকে স্থিরীকৃত করেছে যেটা তোমাকে একটি গণতান্ত্রিক দেশে একজন স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা দিয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এটা হল যে, তুমি এমনই বোকা যে তাদেরকে বিশ্বাস করে বসে আছ।


বর্তমান দিনে একটা বৃহৎ পার্থক্য হল প্রকৃতির প্রতি মানুষের স্বাভাবিক দাসত্ব এবং মানুষের প্রতি মানুষের অস্বাভাবিক দাসত্বের মধ্যে। প্রকৃতি তার দাসদের প্রতি বিশেষ সহসাই যত্নশীল। যদি সে তোমাকে খাদ্য খেতে ও পান করতে জোর করে সে তখন এমনই অপরূপ ও আনন্দদায়ক খাবার ও পানীয় তৈরী করে যে, যখন আমরা সেটা জোগাড় করতে পারি তখন মাত্রা না রেখেই গোগ্রাসে খাদ্য খাই ও পান করি।


আমরা না ঘুমোলে পাগল হয়ে যাব; কিন্তু তারপর ঘুম এত আনন্দায়ক যে আমাদের সকালে উঠতে খুব অসুবিধে হয় এবং সাধারণ যুবকের কাছে আগুনের ধার এবং পরিবারগুলি এত আরামদায়ক মনে হয় যে, তারা বিবাহ করে এবং তাদের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করে এবং তাদের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য সমাজ গঠনের কাজে যোগ দেয়। আর ঠিক এইভাবেই দাসত্বের স্বাভাবিক পরিণতির তিক্ততার চেয়ে তাদের পরিতৃপ্তিতে আমরা মহত্তম আনন্দ লাভ করে থাকি। আমরা প্রশংসা করার উদ্দেশ্যে স্পর্শকাতর গানগুলি লিখে থাকি। একজন ভাঁড় তার রাত্রিকালীন খাবার হো সুইট হোম' গান গেয়ে রোজগার করে থাকে।


একজন ব্যক্তির প্রতি আরেকজন ব্যক্তির দাসত্ব ঠিক এর বিপরীত। আমাদের কবিরা এর প্রশংসা করে না, তাঁরা বলেন কোন মানুষই ততটা ভালো নয় যতটা আরেকটা মানুষের প্রভু হবার সে উপযুক্ত হয়। মহান ইহুদি মহাপুরুষদের মধ্যে সাম্প্রতিকতম হলেন কার্ল মার্ক্স নামের ভদ্র মহোদয়, যিনি তাঁর জীবনের সর্বস্ব অতিবাহিত করেন। এই প্রমাণ করতে যে স্বার্থকেন্দ্রিক নিষ্ঠুরতায় কোনো চরমপন্থী নেই যাতে মানুষের প্রতি মানুষের দাসত্ব বন্ধ হবে, যদি আইন করে তা বন্ধ করা না হয়। তুমি নিজেই দেখতে পাবে সে এটা তৈরী করে একধরনের দীর্ঘকালীন গৃহযুদ্ধের—যাকে শ্রেণিসংগ্রাম বলে, দাসেদের এবং তাদের প্রভুদের মধ্যে, সংঘবদ্ধভাবে একদিকে ট্রেড ইউনিয়নগুলি এবং অন্যদিকে এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনগুলি। সন্ন্যাসী টমাস মুর যিনি অতি সাম্প্রতিক কালে সন্ন্যাসী বলে স্বীকৃত হয়েছেন, বলেছেন যে আমরা কখনও একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাজ পেতে পারি না যতদিন না এই সংগ্রাম শেষ হয়ে দাসত্ব একেবারে মুছে গিয়ে থাকে এবং বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যেকে এই পৃথিবীর কর্মযজ্ঞে তার নিজের অংশটুকু নিজের হাত ও মস্তিষ্কের সাহায্যে করে ফেলে অন্যের ঘাড়ে সেই দায়িত্ব চাপিয়ে না দিয়ে। খুব সাম্প্রতিককালে মালিক সম্প্রদায় তার পার্লামেন্ট, স্কুল এবং খবর কাগজগুলির মাধ্যমে দারুণভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ হল স্বাধীন মানুষের দেশ এবং আমাদের পূর্ব পুরুষেরা আমাদের জন্য স্বাধীনতা জয় করে এনেছেন যখন তার রাজা জনকে বাধ্য করেছে ম্যাগনা কার্টায় সই করতে—যখন তারা উইলিয়ামকে বাধ্য করেছে বিল অব রাইট্স গ্রহণে, যখন তারা আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ভালোই করেছে—যখন তারা ওয়ার্টালু এবং ইটনের খেলার মাঠে ট্রাফালগারের যুদ্ধ জিতেছে—এবং যখন শুধুমাত্র অন্য দিনে তারা একেবারে অনিচ্ছুকভাবে পরিবর্তিত করেছে জার্মান, অস্ট্রিয়ান রাশিয়ান এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যগুলিকে প্রজাতান্ত্রিক দেশে।


আমরা যখন চিৎকার করি তখন আমাদের বলা হয় যে, আমাদের সকল দুঃখ-কষ্ট আমাদেরই সৃষ্ট কারণ আমাদের ভোটদেবার ক্ষমতা আছে। যখন আমরা বলি 'ভোটে কি ভালো হয়'? আমাদের তখন বলা হয় যে, আমাদের কারখানা সংক্রান্ত আইনগুলি আছে, আয় নির্ধারণ সংস্থা আছে, অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আছে এবং নতুন নতুন আইন আছে ইত্যাদি—একজন যুক্তিসংগত মানুষ আর কি আশা করতে পারে। আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে ধনীরা কর দেয় তাদের আয়ের এক চতুর্থাংশ অথবা এক তৃতীয়াংশ এমনকি অর্ধেক আবার এমনকি তাদের আয়ের চেয়েও বেশী অথচ গরিবদের কথা স্মরণ করাই হয় না যে, তাদেরকে তাদের আয়ের বেশীর ভাগটাই দিতে হয় ভাড়া হিসাবে। উপরন্তু দুবার কাজে লাগাতে হয়। যেহেতু তাদের সেটা প্রয়োজন অবশ্য যদি তারা স্বাধীন ভাবে থাকে।


যখনই কোন অবিচারের বিরুদ্ধে বিখ্যাত লেখকেরা প্রতিবাদের আওয়াজ তোলেন। ধরা যাক্ ভলতেয়ার এবং রুশো এবং টম পেইন প্রমুখেরা অষ্টাদশ শতাব্দীতে অথবা করেট এবং শেলী, কার্ল মার্ক্স এবং লাসল ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবার লেনিন এবং ট্রটস্কি বিংশ শতাব্দীতে যখন প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন, তখন তোমাদের শেখানো হয় যে, তারা নাস্তিক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি, খুনী এবং বদমাইশ এবং তাদের বই কেনা বা বিক্রী করা একধরনের অপরাধমূলক কাজ। যদি তাদের শিষ্যেরা একটি আন্দোলন করে ইংল্যান্ড সরকার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এং অন্য ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীদেরকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে তাদের দিয়ে আন্দোলনকারীদের চাপ দিয়ে দাসব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার বা ফিরিয়ে আনার জন্য। যখন এই যৌথ শাসকরা ওয়াটারলুতে সফলতা অর্জন করেছিল, এই জয় তখন বিজ্ঞাপিত হয়েছিল ব্রিটিশ স্বাধীনতার অপর একটি জয় হিসাবে এবং ব্রিটিশ অর্থচুক্তিতে অভ্যস্ত দাসেরা, লর্ড বায়রনের বিলাপ সত্ত্বেও এই সমস্ত বিশ্বাস করেছিল এবং হই হই করে জয়ধ্বনি দিয়েছিল। যখৰ কোন বিপ্লব জয়যুক্ত, যেমনটি ১৯২২-এ রাশিয়াতে হয়েছে, লড়াই থেমেছে, কিন্তু অভদ্র ব্যবহার, চরিত্র হননে মিথ্যাভাষণ অসত্য টিকে থেকেছে ততদিন, যতদিন না বিপ্লবাত্মক রাষ্ট্র উন্নীত হয়েছে। প্রথম সারির মিলিটারি শক্তিতে। তারপর আমাদের কূটনীতিবিদেরা বেশ কয়েক বছর ধরে বিপ্লবী নেতাদেরকে খলনায়ক ও বিশ্বাসঘাতক বলে ধিক্কার জানাবার পর, ঠিকভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের রাত্রিকালীন ভোতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।


এখন যদিও এই মহান অহঙ্কারী জনগণ মানেই হল ইচ্ছাকৃতভাবে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ জনগণকে বিপথে পরিচালিত করা, এটা শেষ হয় মালিক সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণভাবে অন্যপথে পরিচালিত করে। একজন ভদ্রলোক যার মননশীলতা তৈরী হয়েছে ভদ্রলোকদের ছেলেদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এক শিক্ষানবিশী বিদ্যালয়ে, পাবলিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ নেবার আগে, যিনি পাঠ নিয়েছেন ভ্রান্ত ইতিহাস এবং অসৎ রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং চাটুকারিতার বৃত্তির এই সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি থেকে, যে শিক্ষা যে কোন একজন শ্রমিক পেতে পারত, কারণ ভদ্রলোকেরা শিক্ষা তাকে শিখিয়েছে যে সে একজন খুব ভালো লোক, যে ওপর তলার বাসিন্দা সাধারণ মানুষের চেয়ে যাদের কর্তব্য ওই ভদ্রলোকেরা পোশাক ঝেড়ে দেওয়া, তার পার্সেল বহন করা এবং তার জন্য আয় করা এবং সেহেতু সে সম্পূর্ণ রাজি তার প্রতি এরূপ আচরণে, সে সততার সঙ্গে বিশ্বাস করে যে, এই ব্যবস্থা তাকে এমন সুন্দরভাবে নির্দিষ্ট করেছে তার প্রতিভার সুন্দর বিচার করে, যেটা হল সকল সম্ভাব্য ব্যবস্থাগুলির সেরা এবং তার জন্য প্রয়োজন হলে সে তার রক্ত ঝরিয়ে দেবে এবং তোমরা তোমাদের শেষ রক্তবিন্দুও দিয়ে দেবে এই ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। কম মজুরীর হীন ভেবে নেওয়া শ্রমিকেরা এত নিশ্চিতভাবে ভদ্রলোকের মত এর সম্বন্ধে ভাবতে পারে না। ঘটনাগুলি কর্কশভাবে এর বিরুদ্ধে। দুঃসময়ে, যে সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা পেরোচ্ছি, তাদের বিরক্তি এবং হতাশা কখনও কখনও তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের অনুসন্ধানগুলিতে লাথি মারতে সমস্ত কিছু ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে এবং তাদেরকে উদ্ধার করা হয় অত্যাচারের হাত থেকে নেপোলিয়নের মতো কোনো একজন প্রতিভাধরের দ্বারা, যার একজন সম্রাট হবার ইচ্ছা আছে এবং যার মমতা ও মস্তিষ্ক এবং শক্তি আছে সেখানে সুযোগ সন্ধান করে ঝাঁপিয়ে পড়ার। কিন্তু দাসগোষ্ঠীরা যারা সম্রাটের জন্য জয়ধ্বনি দেয় তারাই আবার ব্রিটিশ বা আমেরিকার ব্যালটের ওপরে ঢ্যারা কাটা দিয়ে দেয় ততদূর পর্যন্তই যতদূর তাদের স্বাধীনতার ব্যাপারে যুক্ত আছে।


এতক্ষণ পর্যন্ত আমি যা উল্লেখ করলোম তা কেবলমাত্র একজন স্বাভাবিক এবং ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি কোন উপলব্ধিতে বা সিদ্ধান্তে আসতে চাই না, কেন না সেটা আমাকে বিতর্কের মধ্যে ঠেলে দেবে এবং কখনই বিতর্ক ভালো নয় যখন তুমি আমাকে উত্তর ফিরিয়ে দিতে পারছ না। আমি কখনওই রেডিওর মাধ্যমে বিতর্কের মধ্যে পড়তে চাই না। আমি তোমার কাছ থেকেও কোন সিদ্ধান্তমূলক মতামত করতে চাচ্ছি না, কারণ তুমি কোন ভয়ঙ্কর মতামত দিয়ে ফেলতে পার, যতক্ষণ না। তোমার মস্তিষ্ক ঠিকঠাক ভাবছে। সর্বদা মনে রাখবে যদিও কেউ পছন্দ করে না দাস হিসাবে অস্থায়িত হতে, সেই ধরণের স্বচ্ছ আওয়াজের মতো চালাকি ও অনুসৃত হতে। অ্যারিষ্টটলের মত মহাপুরুষেরা দেখিয়েছেন যে, আইন শৃঙ্খলা ও সরকার অসম্ভব হয়ে পড়বে যতক্ষণ না জনগণ মান্য করে সুন্দর পোশাকে সজ্জিত হয়ে, বিশেষ উচ্চারণে কথা বলে, প্রথম শ্রেণির গাড়িতে ভ্রমণ করে অথবা খুব ব্যয়বহুল গাড়িতে অথবা বেশ হৃষ্টপুষ্ট ঘোড়ার পিঠে চড়ে এবং কখনও নিজেদের জুতো পরিষ্কার না করে, নিজেদের কোনকিছুই না করে যেগুলো সম্ভবত ঘণ্টি বাজিয়ে এবং আদেশ করে সাধারণ মানুষকে দিয়ে করানো হয় তা করে। এবং এর অর্থ অবশ্যই প্রকাশ করে যে, তারা খুব ধনী, কোন দায়দায়িত্ব এবং বাধ্যবাধকতা ছাড়াই একমাত্র সাধারণ মানুষের মনের ওপরে মহৎ ব্যক্তিত্ব বা ঈশ্বর প্রতিম ভাবনা চিন্তার ছাপ তৈরীর দায় ছাড়া, সংক্ষেপে বলা যায়, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তুমি নিশ্চিত করে জনগণকে অশিক্ষিত মূর্তিপূজারি তৈরী করা বাধ্য শ্রমিক ও আইন মেনে চলা নাগরিক হবার আগে।


এটা প্রমাণিত করতে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, যদিও দশজন ভোটদাতাদের মধ্যে নয়জন খেটে খাওয়া শ্রমিক পর্যায়ের এটা খুবই অসুবিধার যে—তাদের মধ্যে কিছু শ্রমিককে উৎসাহিত করা হয় তাদের নিজেদের শ্রেণির সদস্যদের ভোট দিতে। যখন মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় এবং পার্লামেন্টে দাঁড়াবার ক্ষমতা দেওয়া হয় তখন তারা তাদের ভোটের প্রথম ব্যবহার করে নিবেদিত প্রাণ এবং সেবিকাগোছের মহিলাদের হারিয়ে দিয়ে এমন একজন মহিলাকে বেছে নেয় যিনি সর্বতোভাবে ধনী ও ব্যতিক্রমীভাবে আনন্দদায়ক ব্যক্তিত্বকে।


এই হল মনুষ্যচরিত্র এবং তুমি কোনভাবেই ব্যক্তিচরিত্রকে পরিবর্তিত করতে পার না। অন্যথায় বলতে গেলে এটা ধরা হয় যে, মনুষ্য চরিত্র পৃথিবীতে সবচেয়ে সরলতম ঘটনা, যাকে পরিবর্তন করা যায় যদি তাকে কম বয়সে ধরা হয় এবং সেবার মনোভাব নিয়ে দাস সমাজ এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতা নিয়ে মালিক সম্প্রদায়গুলি হল পুরোপুরি ভাবে শিক্ষা ও প্রচার ব্যবস্থার নকল উৎপাদিত বস্তু, যেটা তার কাজ শুরু করে আমাদের শিশুদের ওপর বহুদিন আগে থেকেই এমনকি তারা দোলনা ছাড়ার আগেই। একটা বিপরীত মানসিকতা, যেমন যুক্তিসাপেক্ষ তৈরী করা যায় একটি বিপরীতমুখী শিক্ষা ও প্রচার ব্যবস্থার দ্বারা। তুমি তোমার জন্য বিষয়টাকে উল্টোভাবেও ভাবতে পার, কোনভাবেই যেন তোমাকে পৌঁড়া বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে তুলতে আমাকে বাধ্য করো না।


বাস্তবমুখী প্রশ্নটি হল প্রথমেই কীভাবে সারা দেশের আয় দিনের পর দিন সমানভাবে বন্টন করা যাবে সুষমভাবে। বড় বড় খামারে যদি পৃথিবীকে কৃষির দিক দিয়ে কাটিত করা হয় যন্ত্রচালিত লাঙল ও রাসায়নিক সারের দ্বারা এবং শিল্পের দিক থেকে বড় বড় বৈদ্যুতিক সুবিধাগ্রস্ত কারখানা গুলোতে যান্ত্রিকভাবে ঐশ্বর্যপূর্ণ যেকোন একটি মেয়ে চালাতে পারে তাহলে এর তৈরী জিনিস এত উন্নতমানের ও প্রচুর পরিমাণে জোগাবে অদক্ষ শ্রমিকদের এবং ম্যানেজার ও বৈজ্ঞানিক কর্মচারীদের সমপরিমাপ, কিন্তু এটা ভুলে যেও না যে, যখন তুমি শুনতে পাবে আধুনিক যন্ত্রপাতির গল্পগুলি যেটা একটা মেয়ের পরিচালনার দ্বারাই তৈরি করত কিন্তু এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ছুঁচ বা আলপিন বা দেশলাই এর মতো উৎপাদনা ঘিরেই যা আমরা বাঙন করতে বা পান করতে পারি না। খুব অল্পবয়সি শিশুরা খুবই উৎসাহের সঙ্গে ছুঁচ বা দেশলাই কাঠি খেয়ে ফেলে কিন্তু এগুলো কোন সুস্বাদু বা পুষ্টিকর খাদাই নয় এবং যদিও আমরা এখন আকাশ এবং পৃথিবী চষে ফেলতে পারি, নাইট্রোজেন নিয়ে এসে এর ফলন বাড়াতে পারি এবং ঘাসের মান আরোও উন্নততর করতে পারি এবং যার ফলে আমরা পেতে পারি গবাদি পশু এবং তাদের দুধ, মাখন ও ডিমগুলি। প্রকৃতি হয়তো বা কৌশলগতভাবে তার দান আমাদের প্রতি কমিয়ে দিতে পারে যদি রসায়নবিদেরা প্রকৃতিকে নির্লজ্জভাবে শোষণ করে।


এখন এই পর্যালোচনার একটা নিষ্পত্তি করা চাই। তোমার স্বাধীনতার স্বপ্নগুলির থেকে সারা সময় ধরে ইচ্ছেমত যা খুশি করার আশা বা প্রবণতা মুছে ফেলো। কমপক্ষে তোমার সময়ের বারোঘণ্টা প্রকৃতির আদেশ অনুযায়ী কোন নির্দিষ্ট কাজ করার মধ্য দিয়ে কাটাতে হবে এবং তা যদি তুমি না কর তাহলে তুমি হবে। কাজের জন্য এই বারো ঘণ্টা সময় এবং আবার পুনরায় তুমি প্রকৃতির দ্বারা হত হতে পার যদি না তুমি তোমার রুজি রোজগার উপার্জন করতে পার অন্য কাউকে দিয়ে তোমার জন্য তা অর্জন করিয়ে নিতে পারে। তুমি যদি কোন একটা সভ্য দেশে বাস করে। তবে তোমার স্বাধীনতা সেই দেশের পুলিশী শাসনের ও আইনের ঘেরা টোপের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেই, যেকোন বা যারা তোমাকে বাধ্য করবে কোন কিছু করতে বা না করতে এবং ভাড়া ও কর দিতে। তুমি যদি এই সমস্ত নিয়মকানুন না মান তাহলে আদালত তোমাকে হত্যা করবে। যদি আইনগুলি যুক্তিপূর্ণ ও সমদর্শী হয় তাহলে তোমার বলার কিছু নেই নালিশ করার কোন যুক্তি নেই কারণ তারা তোমার স্বাধীনতার পরিধিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে তোমাকে অপমান, ছিনতাই ও বিশৃঙ্খলার হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে।


কিন্তু যেহেতু বর্তমানে সমাজ গঠিত তাই তোমার ও পরে আরেকটি ঘনিষ্ঠ ফর্মের বন্ধন বর্তায়, যেটা তোমার জমিদার বা নিয়োগকর্তার ব্যাপার। তোমার জমিদার তাঁর জমিদারির মধ্যে তোমাকে বাঁচতে দিতে গররাজি হতে পারেন যদি তুমি তার কথা অনুযায়ী না চল—তুমি যদি চার্চে না গিয়ে চ্যাপেলে যাও, তুমি যদি তার মনোনীত ব্যক্তিকে ভোট না দিয়ে অন্য কাউকে দাও অথবা তুমি যদি হাড় ও পেশির সঞ্চালনের সাহায্যে কোন রোগকে সারাবার প্রক্রিয়া অভ্যাস কর অথবা তুমি যদি একটি দোকান খোল। তোমার নিয়োগ কর্তা তোমার পোশাকের শৈলী, রঙ এবং অবস্থা কেমন হবে তা ঠিক করে দিতে পারেন এবং তার সঙ্গে সঙ্গে কাজের সময়ও বদলাতে পারেন। যে কোন মুহূর্তে তিনি— তোমাকে রাস্তায় নামিয়ে হীনবল বেকারদের সঙ্গে ভিড়িয়ে দিতে পারেন। সংক্ষেপে তোমার ওপর তার খবরদারি যে কোন রাজনৈতিক একনায়কের চেয়েও অনেক বেশী। বর্তমানে এর হাত থেকে তোমার মুক্তির একমাত্র উপায় বা অস্ত্র হল ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে ধর্মঘট করা যেটা একমাত্র প্রাচীন প্রাচ্য দেশীয় উপোসের উপায় তোমার শত্রুর দোর গোড়ায় বসে থাকে। এখন দেশের পুলিশ তোমাকে অনুমতি দেবে না তোমার নিয়োগ কর্তার দোরগোড়ায় উপোস দিতে, যদি উপোস করতেই হয় তাহলে তুমি তোমার যদি তুমি এই উপায় অবলম্বন কর ধর্মঘটের চরম রূপ —–একই ঘরে বসে দাও— সময়ে সমস্ত শ্রমিকদের সাধারণ ধর্মঘট চলে তবে সেটা হয়ে ওঠে মানুষের ভুলের চরম রূপ—যদিও সম্পূর্ণভাবে ধর্মঘট চলে, তবে এটা এক সপ্তাহের মধ্যে সমগ্র মানবসমাজকে মুছে দেবে এবং শ্রমিকেরাই প্রথমে মুছে যাবে। ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত ধর্মঘট পাগলামির পর্যায়ে। সুহমনস্ক শ্রমিক রাজনীতি কখনই মঞ্জুর করবে না একসঙ্গে একটার বেশী বড় ধর্মঘট অন্য শিল্পের শ্রমিকের বেশী সময় শ্রম দিয়ে এই ধর্মঘটকে সমর্থন করে।


এখন ব্যাপারটাকে চল একটা রূপ দেওয়া যাক্। যদি তোমাকে দিনে বারো ঘণ্টা কাজ করতে হয় তবে তোমার খুশি মত ঘণ্টা চারেক সময় তোমাকে কাটাতে দেওয়া উচিত, দেশের নিয়ম অনুযায়ী এবং তোমার অধিকারে পর্যাপ্ত টাকা একটা দারুণ বই কেনার জন্য অথবা ছায়াছবি দেখতে যেতে পারে অথবা একটা আধবেলার ছুটিতে ফুটবল ম্যাচ দেখতে যেতে পার অথবা তোমার মন যা চায় তাই করতে পার। কিন্তু এমনকি এখানেও প্রকৃতি খুব ভালোভাবেই নাক গলাতে পারে কারণ, তুমি যদি আটঘণ্টা কাজ করে যেটা খুব পরিশ্রমের এবং এরপরে বাড়িতে গিয়ে যে মনের উৎকর্ষতা বাড়াবার জন্য আমার বইগুলি পড়, তবে তুমি দেখবে তুমি আধ মিনিটেই অবরদস্ত ঘুমিয়ে পড়েছ এবং তোমার মন থেকে যাবে তার পিছিয়ে পড়া বর্তমান অবস্থাতেই।


তারপর আমি ব্যাপারটাকে গ্রহণ করি এভাবে যে দশজনের মধ্যে একজন আরো স্বাধীনতা চায় এবং তাই ভাষণ শুনতে চাই, এ ব্যাপারে আমরা যত এগোই একটি বোট বা একটি ছোটো খাটো সাহায্য সংক্রান্ত ব্যপার—তখন আমরা একে অপরকে যে একমাত্র পরামর্শ দিয়ে থাকি তা হল শেক্সপিয়ারের ইয়াগো যেমনটি বলেছে–“তোমার টাকার ব্যাগে টাকা রাখো”। কিন্তু আমরা যেহেতু মাইনের দিনে টাকার ব্যাগে রাখার মত খুব কম অর্থই পাই এবং সারা সপ্তাহ ধরে অন্য লোকেরা এখান থেকে অর্থ বের করে নেয়, তখন ইয়াগোর পরামর্শ বাস্তবিকই তাঁর প্রসঙ্গ হারিয়ে ফেলে। আমরা যা চাই তা পাবার আগেই আমাদের নীতির পরিবর্তন করা জরুরি এবং এর মধ্যে আমাদের স্বাধীনতা সম্বন্ধে হাওয়া দেওয়া বন্ধ করতে হবে, কারণ ইংল্যাণ্ডের অধিকাংশ মানুষ স্বাধীনতা কাকে বলে জানে না, কখনও তার স্বাদ পায়নি। সবসময়েই স্বাধীনতার পুরাতন ইংরাজী নাম বিশ্রাম এই নামে ডাকে এবং হইচই চালিয়েই যায় আনন্দের ব্যাপারে আরো বিশ্রাম ও আরো অর্থের জন্য বেশ খানিকক্ষণ ভালোভাবে কাজ করার পর। চল, আমরা রুল, ব্রিটানিয়া, গান বন্ধ করি, যতক্ষণ না আমরা এটাকে সত্যে পরিণত করতে না পারি। যতক্ষণ না করতে পারি একজন পার্লামেন্টের সদস্য যিনি আমাদের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার প্রতি আমাদের প্রীতি ও ভালোবাসার সম্বন্ধে কথা বলেন, তিনি নিশ্চিতভাবে প্রথম সারির বিশৃঙ্খলাকারী যিনি বাঁচতে চান, আমাদের শ্রমের ওপরে যার বিরুদ্ধে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়, যেমনটি তিনি চান তাঁকে কখনই ভোট দিও না।


এখন ধরা যাক্, আমরা অবশেষে আমাদের যা আছে অর্থাৎ আমরা যে অবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত তার চেয়েও প্রচুর অবসর সময় এবং প্রচুর অর্থ পেলাম। তাহলে আমরা এই বাড়তি সময় ও অর্থ নিয়ে কী করব? আমি আমার শৈশবে জেনেছিলাম যে শয়তানের তার বদমাইশির জায়গা খুঁজে নেয় অলস হাতগুলিতে। আমি দেখেছি মানুষের সৌভাগ্য বলে তারা তাদের সুখ, স্বাস্থ্য এবং শেষ জীবন পর্যন্ত হারায় যেমনটি নিশ্চিত করে ঘটে শ্যাম্পেন ও সিগারেটের জায়গায় ইঁদুরমারা বিষগ্রহণ করলে। অবসর সময় নিয়ে কি করা উচিত—এটা জানা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়, যদি না আমরা অবসর নিয়ে বেড়ে উঠি।


তাই আমি তোমাকে একটি প্রশ্নের মধ্যে অবতরণ করাতে চাই চিন্তা করার জন্য যে তোমার পছন্দ অনুযায়ী তুমি দিনে আটঘণ্টা কাজ করে, পঁয়তাল্লিশে অবসরকালীন ভাতা সম্পূর্ণভাবে নিয়ে অবসর নেবে না দিনে চারঘণ্টা করে কাজ করে যাবে সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত। আমাকে উত্তর পাঠাবার দরকার নেই, দয়া করে এই ব্যাপারটা নিয়ে তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বল!

Sunday, February 27, 2022

Bengali Meaning of Dream Children: A Reverie by Charles Lamb. / Dream Children: A Reverie এর বাংলা অর্থ ।





স্বপ্নের শিশুরা : একটি দিবা স্বপ্ন
--Charles Lamb

শিশুরা পছন্দ করে তাদের গুরুজনদের ছোটবেলার গল্প শুনতে। তারা তাদের কল্পনার ডানা মেলে ধরে কাকা অথবা বৃদ্ধ ঠাকুমার বিষয় শুনতে চায় যাদের তারা, কখনও চোখে দেখেনি। এই উৎসাহে মশগুল হয়ে আমার শিশুগুলি (অ্যালিস ও জন) একদিন সন্ধ্যায় আমাকে ঘিরে ধরেছিল তাদের বড়োমা শ্রীমতি ফিল্ডের গল্প শোনার জন্য। নরফোকের এক বিশাল প্রাসাদে বাস করতেন শ্রীমতি ফিল্ড, সেটা আমার বাবা যেখানে বাস করতেন তার চেয়ে শতগুণ বড় ছিল। তখন ঐ অঞ্চলে সাধারণত বিশ্বাস করা হত যে দেশের ঐ অংশে নাকি 'চিলড্রেন ইন দ্য উড’ ব্যালাডটিতে বর্ণিত বিয়োগান্ত ঘটনাটি ঘটে গিয়েছে। এটা নিশ্চিত যে, এক বোকা ধনী ব্যক্তি মার্বেলের বসতি নির্মাণের আগে পর্যন্ত সেই শিশুদের এক নিষ্ঠুর কাকার সম্বন্ধে সম্পূর্ণ গল্প সুন্দর ভাবে খোদিত ছিল বিরাট হলঘরে কাঠের চিমনির উপর। এগুলির মধ্যে রবিন রেডব্রেষ্টের পুরো গল্পটিও ছিল। তবে নতুন গৃহ নির্মাণের পর আধুনিক ছবি বসানো হয়েছে, যার মধ্যে কোন গল্পের নামগন্ধ নেই। অ্যালিস এখানে তার মায়ের মতো চাহনিতে তাকালো যেটা তার কোমল চিত্তবৃত্তির পরিচয় দেয়। তারপর আমি বলেই চললাম তাদের বড়ো মা ফিল্ডও কত ধর্মপ্রাণা ও মহীয়সী মহিলা ছিলেন। প্রত্যেকের ভালোবাসার ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন তিনি। যদিও তিনি এই বিশাল প্রাসাদের মালিক ছিলেন না, কেবলমাত্র এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন, তবুও তাঁকে মালিক বলে মনে হতো, কারণ প্রকৃত মালিক তাঁর পছন্দ মতো আরো বিশাল বিলাস বহুল প্রাসাদ কিনেছিলেন পাশের কোন অঞ্চলে। কিন্তু শ্রীমতি ফিল্ড সেখানে এমন ভাবে বসবাস করতেন যেন সেটা তাঁর নিজের বাড়ী এবং যতদিন তিনি বেঁচেছিলেন এর সম্পূর্ণ মর্যাদাটুকু বজায় রাখার চেষ্টা করতেন। তারপর ধীরে ধীরে এ সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং তার সমস্ত পুরাণো অলঙ্কার স্বরূপ বস্তুগুলি স্থানান্তরিত হয়ে যায় মালিকের নতুন বাড়ীতে। এর ফলে নতুন প্রাসাদোপম বাড়িটীকে ভুতুড়ে লাগছিল, যেমন মনে হচ্ছিল আবার পুরানো চূড়াগুলিকে বয়ে এনে সেঁটে দিয়েছে লেডি সি-এর সুদৃশ্য বৈঠকখানাটিতে।পীচ “জন একটু হেসে বলল, “এটা নিছকই বোকামি”। তাঁরপর আমি বললাম শ্রীমতি ফিল্ড কীভাবে মারা গেলেন, তাঁর শব যাত্রায় শুধু গ্রামের গরীব লোকেরাই নয় আশেপাশের শহরাঞ্চলের বেশ কিছু সম্পন্ন মানুষ যোগ দিয়েছিলেন এবং এভাবেই একজন মহীয়সী ও ধর্মপ্রাণা-মহিলার প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন। ফিল্ড এতই পবিত্র ছিলেন যে ধর্মগ্রন্থগুলি তাঁর হৃদয়ের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল এবং লাবণ্যময়ী বাইবেলের অনেকাংশ তাঁর মুখস্থ ছিল। ছোট অ্যালিস তাই শুনে তাচ্ছিলা সূচক ভঙ্গিতে দুহাত প্রসারিত করল। আমি বলে চললাম— বড়োমা একদা কীরকম “লম্বা, দৃঢ় লাবণ্যময়ী মহিলা ছিলেন এবং তাঁর যৌবন বয়সে তিনি ঐ অঞ্চলে একজন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী হিসাবে নাম করেছিলেন। একথা শুনে অ্যালিস তার পাগুলি এলোপাতাড়িভাবে দোলাতে শুরু করল যতক্ষণ না আমি গম্ভীরভাবে তাকিয়ে তাকে সংযত করলাম। তারপর আমি বলেই চললাম নিষ্ঠুর ক্যান্সার রোগের ব্যথায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঐ অঞ্চলের সেরা নৃত্যশিল্পী। তিনি এতই মহীয়সী ও ধর্মপ্রাণা মহিলা ছিলেন যে সেই মারাত্মক ব্যাধি তাঁর উদ্যমকে এতটুকু দমিয়ে দিতে পারেনি। তারপর আমি বললাম তাঁর ঘুমের অভ্যাস সম্বন্ধে—তিনি সেই বিশাল বাড়ির নির্জন একটা ঘরে ঘুমতেন একাই, আর বিশ্বাস করতেন শিশু দুটির ছায়ামূর্তি মাঝরাতে তাঁর ঘরের কাছে সিঁড়ি দিয়ে উপর নীচে যাতায়াত করতে দেখা যেত। অবশ্য তিনি বলতেন “ঐ নিষ্পাপ শিশুছায়া মূর্তি তাঁর কখন কোন ক্ষতি করবে না।" এবং তাই শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে থাকতাম। যদিও তখন আমি শুতাম আমার আয়ার সঙ্গে কারণ বড়োমা ফিল্ড-এর মহত্ব বা ধার্মিকতার অর্ধেকেরও অধিকারী ছিলাম না; তবুও আমি কখনো ঐ ছায়ামূর্তি শিশুদুটিকে দেখতে পাইনি। বড়োমা ফিডের সাহসের কথা শুনে জন বড়ো বড়ো চোখ করে সাহস দেখানোর চেষ্টা করল। তারপর আমি বলে চললাম আমরা বিশাল বাড়ীতে ছুটির দিনে উপস্থিত হলে বড়োমা নাতি নাতনিদের প্রতি কিভাবে ব্যবহার ও যত্ন-আত্তি করতেন। আমি সেখানে কয়েকঘণ্টা বারোজন সীজারের মূর্তির দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতাম যাঁরা ছিলেন রোমের সম্রাট। ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম যতক্ষণ না প্রাচীন মার্বেল নির্মিত মূর্তিগুলি আমার প্রাণের সাথে এক হত বা আমি তাদের সঙ্গে মার্বেলে রূপান্তরিত হতাম। আমি বিরাট অট্টালিকায় ঘুরে বেড়াতে ক্লান্তি বোধ করিনি, সেখানে ছিল বেশ কিছু বড়ো বড়ো ফাঁকা ঘর যেগুলিতে অতি ব্যবহারে জীর্ণ কাপড়ের উপর সুতোর কাজ করা ঝুলান পর্দা ছিল। আর ছিল ওক কাঠের বাঁকানো প্যানেল। কখনও কখনও কিছুটা সময় আমি নিঃসঙ্গে কাটাতাম পুরানো আমলে সাজানো বিরাট বাগান বাড়ীতে। তবে মাঝে মাঝে সেখানে দেখা হত বাগানে কাজ করা এক মালীর সঙ্গে। দেওয়ালে ঝুলতে থাকা পীচফল, আমি কখনোই সেগুলি পাড়তে যেতাম না কারণ সেইগুলি ছিল নিষিদ্ধ ফল। তবে এর থেকে আনন্দদায়ক ছিল প্রাচীন ইউ-গাছ আর ফার গাছের মাঝে ঘুরে বেড়ানো; আর বিভিন্ন ধরণের ফল কুড়োতাম যেগুলি কোনকাজের ছিল না একমাত্র দেখা ছাড়া। আমরা মাঝে মাঝে কচিতাজা ঘাসের উপর নিজেদেরকে এলিয়ে দিতাম অথবা সেই ছাদের তলায় যেখানে কৃত্রিম ভাবে উষ্ণতা সৃষ্টি করে লেবুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করা হত। সেখানে মাঝে মাঝে নিজেকে বিছিয়ে দিতাম যতক্ষণ পর্যন্ত আমি সেই মনোরম উষ্ণতায় লেবুদের সাথে এক বোধ করতাম। মাঝে মাঝে বাগানের উপকণ্ঠে পুকুরটায় ভেসে বেড়ানো টাটকা মাছগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতাম—পীচ, পাতলা খোসা ও মোটা শাঁসের পীচ, লেবুর (যেগুলি অত্যন্ত লোভনীয় ছিল শিশুদের) থেকেও আমি এইসব থেকেই আনন্দ পেতাম বেশী। অর্থাৎ বাগানে বিভিন্ন ধরণের ফল হত, কিন্তু আমি কখনও পাকা ফলের গন্ধে লোভ করিনি। তাই শুনে জন চালাকি করে অ্যালিসের থালায় কিছু আঙুর রেখেছিল। এরপর বেশ জোর গলায় আমি বললাম তাদের বড়োমা ফিড তাঁর সমস্ত নাতি নাতনিদের সমানভাবে ভালোবাসতেন, তবুও তিনি বিশেষভাবে ভালোবাসতেন তাদের কাকা জন এল-কে, কারণ তিনি ছিলেন সুদর্শন ও উদামী একজন যুবক; আমাদের মধ্যে তিনি ছিলেন রাজা; যদিও মাঝে মাঝে তিনি কোন নির্জন প্রান্তে চুপচাপ থাকতেন তবুও তিনি শিকারীদের সবচেয়ে সাহসী ও তেজী ঘোড়ায় চড়ে সকালবেলাতেই ঐ অঞ্চলের অর্ধেকের বেশী ঘুরে আসতেন। তিনি ভালোবাসতেন বিশাল অট্টালিকা ও তার বাগানকে, কিন্তু কখনও তিনি চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকা পছন্দ করতেন না। এবং সেখানে তাদের কাকা সাহসী ও সুদর্শন হয়ে উঠল সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়ে। বড়োমা ফিল্ডও তাকে সমধিক ভালোবাসতে লাগলেন। একবার যখন আমার পা একটু খোঁড়া হয়ে পড়েছিল তখন তিনি আমাকে বয়ে বেড়াতেন তাঁর পিঠে চাপিয়ে কারণ তিনি ছিলেন আমার চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের বড়ো। তবু পরবর্তী কালে তিনি যখন খোঁড়া হয়ে পড়লেন এবং যন্ত্রণায় অধৈর্য হয়ে পড়তেন তখন আমি কিন্তু একবারও তাঁর প্রতি সহৃদয় হইনি। এমনকি আমার একবারও মনে এলোনা পূর্বেকার দিনগুলির কথা যখন তিনি আমার প্রতি দয়াবান ছিলেন। যখন তিনি মারা গেলেন মাসখানেকের মধ্যে মনে হল যেন তিনি বহুদিন আগে মারা গেছেন। জীবন ও মৃত্যুর মাঝে এতটাই দূরত্ব ছিল। আমি তার মৃত্যু সহ্য করেছিলাম যেহেতু তাকে সুন্দর বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু পরে আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে এই ব্যাপারটা যে আমি এক ফোঁটাও চোখের জল ফেলিনি বা অন্যান্যদের মতো ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গমও করতে পারিনি। তখন পর্যন্ত আমি জানতাম না তাকে কতটা ভালোবাসতাম। আমি তাঁর ভালোবাসা হারিয়েছি— আমি হারিয়েছি তাঁর সাথে খুনসুটি করা কিন্তু মনে মনে চাইতাম উনি আবার বেঁচে উঠুক। তার সঙ্গে ঝগড়া করতে মন চাইত (কেননা আমরা মাঝে মাঝে ঝগড়া করতাম) যদিও তাকে আর কখনও পাব না। তিনি না থাকায় অস্বস্তি বোধ হতে লাগল। যখন চিকিৎসক তাঁর একটা পা কেটে নিয়েছিল তখন এধরণের অনুভব হয়েছে। শিশুরা কেঁদে উঠল, এবং তারা তাকাল, আমার কাছে অনুনয় করল যেন আমি আর তাদের কাকার যন্ত্রণা সম্বন্ধে কিছু না বলি। তারা আবদার করল আমি যেন তাদের সুন্দরী ও অত্যন্ত প্রিয় স্বর্গত মায়ের সম্বন্ধে কিছু গল্প বলি। আমি বলে গেলাম কিভাবে দীর্ঘ সাত বছর ধরে আশা নিরাশার পথ ধরে ভালোবাসা চালিয়ে গিয়েছিলাম সুন্দরী অ্যালিস ডব্লিউ-এন এর সঙ্গে। শিশুরা যতটা সহজভাবে বুঝতে পারবে সেভাবে বুঝিয়ে বললাম অবিবাহিত মহিলাদের মধ্যে লজ্জা, বিনয়, অসুবিধা এ ব্যাপারে অস্বীকৃতি থাকে। ছোট অ্যালিস এমনভাবে চোখ মেলে তাকাল যে আমি দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম, এই ভেবে যে আমার সামনে কে বসে আছে আর ঐ উজ্জ্বল চুল কার; আমি তাদের দিকে তাকানো মাত্রই উভয়েই আমার দৃষ্টিতে ধীরে ধীরে আবছা হতে শুরু করল; তারা অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগল, তার শেষে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল অবশেষে যতক্ষণ না পর্যন্ত দুটি বিষাদ প্রতিমা দেখা যায় বহুদূর থেকে। যারা ভাষাহীন ভাষায় আমায় প্রভাবিত করতে চায়নি “আমরা অ্যালিসের সন্তান নই, আমরা তোমার সন্তানও নই, আমরা প্রকৃতপক্ষে কোন শিশু নই। অ্যালিসের শিশুরা বাট্রামকে বাবা বলে ডাকে। আমাদের অস্তিত্বই নেই, বা শূন্য থেকেও হাল্কা, আমরা স্বপ্ন। আমরা কিছু হতে পারতাম আমাদের অস্তিত্ব পেতে গেলে মৃত্যুনদী (লিদী) – তখনই আমার ঘুম ভেঙে গেল, আমি দেখলাম আমি বসে আছি আমার সেই চিরকুমারের আরাম কেদারায় যেখানে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমার পাশে অপরিবর্তনীয় অবস্থায় রয়ে গেছে সদা বিশ্বস্ত ব্রিজেক্ট কিন্তু জন (বা জেমস ইলিয়া) চিরদিনের মতো উধাও হয়ে গেছে।



Saturday, February 12, 2022

Download my Apps on 'English Writings' , 'English Grammar Rule' and others

 CLICK BELOW TO DOWNLOAD 
"ENGLISH WRITINGS ALL IN ONE" APP



 CLICK BELOW TO DOWNLOAD 
"ENGLISH GRAMMAR RULE" APP




 CLICK BELOW TO DOWNLOAD 
"বিপ্লবী দের ছেলেবেলা" APP



 CLICK BELOW TO DOWNLOAD 
"ইংরাজি সাহিত্যের ইতিহাস" APP



 CLICK BELOW TO DOWNLOAD 
"বিজ্ঞানী দের জীবনী" APP