Friday, March 11, 2022

Bengali Meaning of 'Of Studies' by Francis Bacon. 'পাঠ সম্পর্কিত' -- ফ্রান্সিস বেকন

পাঠ সম্পর্কিত
ফ্রান্সিস বেকন



পড়াশুনা আমাদের আনন্দবর্ধন, অলঙ্করণ ও সামর্থ্যবর্ধন করে। মানুষ যখন একাকী থাকে তখন পুস্তকপাঠ তাকে আনন্দ দান করে, বাক্যালাপের সময় তার ভাষাকে অলঙ্কৃত ও মার্জিত করে, সত্যতা ও যাথার্থ্য নির্ণয়ে সাহায্য করে, তার স্বাভাবিক দক্ষতা ও কর্মশক্তিকে বৃদ্ধি করে। দক্ষ কর্মীগণ–সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধি প্রয়োগের দ্বারা বহু সমস্যার সমাধান করে থাকেন, কিন্তু একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তিগণই সঠিক উপদেশ ও সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। তবে অধ্যয়নে অতিমাত্রায় সময় ব্যয় করা আলস্যের লক্ষণ। বই-পড়া জ্ঞানকে আলাপ-আলোচনার অলঙ্কার রূপে অতিমাত্রায় ব্যবহার করা হল পাণ্ডিত্যের ভাগ, আর এই পুস্তক-লব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে সর্বক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে আসা হল পণ্ডিতদের স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য। পুস্তক পাঠ বা অধ্যয়ন আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি বা শক্তিগুলির মান উন্নত করতে পারে বটে, কিন্তু একমাত্র অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই সেগুলি পূর্ণতা লাভ করতে পারে। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বা শক্তিগুলি বন্য বা প্রকৃতি মধ্যস্থ গাছপালার মত। সেগুলিকে কাট-ছাঁট করে একটি বিশেষ রূপ দিতে হয়। অধ্যয়নের সাথে অভিজ্ঞতা মিলিত হয়ে আমাদেরকে নির্দেশ দেয় কি ভাবে আমাদের স্বভাব চরিত্র গড়ে তুলতে হবে, নিজেদেরকে রূপ দিতে হবে। দক্ষ কারিগরেরা শিক্ষাকে ঘৃণা বা অবজ্ঞা করে, সরলমনা লোকেরা একে প্রশংসাসূচক দৃষ্টিতে দেখে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানীরাই এর সদ্ব্যবহার করে থাকেন। অধ্যয়ন প্রকৃত রূপে ফলপ্রসূ হতে গেলে তার সাথে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। অধ্যয়নের লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে খণ্ডন করা নয়, কোন কিছুকে বিনা বিচারে গ্রহণ করা বা আলাপ-আলোচনার জন্য বক্তব্য বিষয় সংগ্রহ করা অধ্যয়নের লক্ষ্য নয়, এর প্রকৃত লক্ষ্য হল অধ্যয়নের বিষয়বস্তুকে বিচার-বিবেচনা পূর্বক গ্রহণ করা। এমন কতকগুলি পুস্তক আছে যেগুলি সম্পূর্ণরূপে গলাধঃকরণ করা প্রয়োজন। আর কিছু আছে যেগুলি ভালভাবে চর্বণ এবং হজম করতে হবে। কিছু বই শুধু অংশতঃ পাঠ করলেই হবে। আর কিছু বই তেমন গভীর আগ্রহ সহকারে না পাঠ করলেও চলবে, কিন্তু এমন কিছু অল্প সংখ্যক বই আছে যেগুলি অত্যন্ত মনোযোগ ও শ্রম সহকারে পাঠ করা প্রয়োজন। এমন কিছু বই আছে যেগুলি অন্য কাউকে দিয়ে পড়ালেও হবে এবং সেগুলির সংক্ষিপ্তসার করে নিলেও হবে। কিন্তু এই কথা সস্তাদরের বইয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সংক্ষিপ্তসার করা বই পরিশ্রুত জলের মত বিস্বাদ। পুস্তকপাঠ মানুষকে যথর্ণতালাভ করতে সাহায্য করে, বাক্যালাপ যে কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবার উপযোগী করে তোলে, এবং লিখন মানুষকে সঠিক বা নিখুঁত করে তোলে। সেজন্য লেখালিখি কম করলে একজনকে প্রবল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন হতে হবে, বাক্যালাপ স্বল্প মাত্রায় করলে তাকে উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হবে এবং সে যদি কম পড়াশুনা করে তাকে ধূর্ত হতে হবে। তাহলে সে যা কিছু প্রকৃতই জানে না, সেগুলিও সে জানে বলে মনে হবে। ইতিহাস পাঠ মানুষকে জ্ঞানী করে, কবির কাবা তাকে রসিক করে তোলে। গণিত শাস্ত্র তাকে দেয় বৌদ্ধিক সূক্ষ্মতা, প্রাকৃতিক দর্শন অর্থাৎ বিজ্ঞান তার জ্ঞানের গভীরতা বৃদ্ধি করে, নীতিশাস্ত্র তাকে দেয় গাম্ভীর্য এবং তর্কবিদ্যা ও অলঙ্কার শাস্ত্র অন্যের সাথে বৌদ্ধিক বিচারে সাহায্য করে। অধ্যয়ন মানুষের চরিত্রকে প্রভাবিত করে জ্ঞান বা বুদ্ধির কোনে কুফল নেই বরং দেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিকার রূপ যেমন বিভিন্ন ব্যায়াম আছে, তেমনি শিক্ষা যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে; যথা—বুঝে পাথরের প্রতিকার হল বলক্ষেপণ, ফুসফুস ও হৃদরোগের হল তীরক্ষেপণ, পাকস্থলীর হল হাঁটা, মাথাব্যাথার হল অশ্বারোহণ। কোন মানুষের মন যদি চঞ্চল হয় তাহলে সে গণিতশাস্ত্র অধ্যয়ন করুক, কারণ এতে সমস্যাগুলি ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপিত হয়। কারও যদি সুগ্ম পার্থক্য বুঝতে অসুবিধা হয়, সে মধ্যযুগীয় দার্শনিকদের গ্রন্থ পাঠ করুক, কারণ তারা চুলচেরা বিচারে অভ্যস্ত। যদি কেউ কোনো বিষয় দীর্ঘক্ষণ মনে না রাখতে পারে, এবং তার বক্তব্য প্রমাণ করতে গিয়ে উপযুক্ত দৃষ্টান্ত দেখাতে সক্ষম না হয়, তাহলে সে উক্লিদের কোর্টের কেস-রিপোর্ট পাঠ করুক। সুতরাং বলা যায়, বিভিন্ন প্রকার মানসিক রোগের বিভিন্ন ঔষধ আছে।

No comments:

Post a Comment