উত্তর
: মধ্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী পর্যায়ে নব্য
প্রস্তর যুগের আবির্ভাব হয়েছিল। আনুমানিক খ্রিঃপূঃ ১০,০০০ থেকে খ্রিঃ পূঃ ৫০০০ অব্দে দক্ষিণ এশিয়ায় এই যুগের সূচনা
হয়েছিল। তবে ভারতে এ যুগের সূচনা হয় দেরিতে, ৬০০০ খ্রিঃ
পূঃ।
· বৈশিষ্ট্য- নব্য প্রস্তর যুগের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
১)
হাতিয়ার- নব্য
প্রস্তর যুগের হাতিয়ারগুলি পূর্বের তুলনায় মসৃণ হয়। সেই
যুগে মানুষরা কোদাল,
গাঁইতি, নিড়ানি প্রভৃতির ব্যবহার শুরু
হয়। এই সময় পাথরে পাথরে ঘষে ব্যবহারযোগ্য হাতিয়ার তৈরী করা হতে থাকে।
2) বয়ন
শিল্পের বিকাশ- নব্য প্রস্তর যুগে প্রথম
বয়ন শিল্প বিকশিত হয়েছিল।
৩)
কৃষির উদ্ভবঃ নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ কৃষিকাজের
কৌশল আবিষ্কার করে এবং স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ফলে খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে
খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়। নব্য প্রস্তর যুগে কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষের
খাদ্য ও আশ্রয়ের অনিশ্চয়তা দূর হয়।
৪)
পশুপালনঃ নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ কৃষির প্রয়োজনে
পশুপালন করতে শুরু করে। পশুকে কৃষি জমিতে কাজে লাগিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা
সম্ভব হয়। পরিবহনের কাজেও পোষ মানানো পশুকে কাজে লাগানো শুরু হয়। এই সময় দক্ষিণ
এশিয়ায় হাতি ও মহিষকে এবং জর্ডনে কুকুর ও ছাগলকে প্রতিপালন করা শুরু হয়।
৫)
স্থায়ী বসতি নির্মাণঃ নব্য প্রস্তর যুগে কৃষি
আবিষ্কারের ফলে মানুষ খাদ্য ও বসবাসের উপযোগী জায়গা নির্বাচন করে স্থায়ীভাবে
বসবাস শুরু করে। ফলে মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে এবং তারা সভ্যতার অগ্রগতির
দিকে আরও একধাপ অগ্রসর হয়।
৬)
মৃৎশিল্পের বিকাশ : এই যুগেই মানুষ কুমোরের
চাকার সাহায্যে মৃৎপাত্র তৈরী করতে শেখে। এসময় মৃৎশিল্প বেশ উন্নতমানে পৌঁছেছিল।
৭)
ধাতুর ব্যবহার : নব্য প্রস্তর যুগের শেষদিকে মানুষ
তামা ও ব্রোঞ্জের জিনিস ব্যবহার করতে শেখে। মানুষের মধ্যে শিল্পীসত্তার বহিঃপ্রকাশ
এ যুগেই হয়েছিল।
৮)
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াঃ মৃতদের সমাধিস্থ করার
প্রথা এ যুগেই চালু হয়। এ সময় আংশিক ও পূর্ণ উভয় ধরণেরই সমাধির প্রচলন ছিল।
১০) ধর্ম বিশ্বাস- প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনা এসময় মানুষের মনে ভয়ের উদ্রেক করে। এই ভয় থেকে জন্ম নেয় ধর্মবিশ্বাস। ভয়ংকর প্রকৃতিকে শান্ত করার জন্য তারা প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে দেবতারূপে পুজো করতে শুরু করে। তারা ঝড়, বৃষ্টি, মাটি, চন্দ্র, সূর্যকে দেবতারূপে মান্য করত।
১১) যানবাহনঃ এই যুগে মানুষ জলপথে যাতায়াতের জন্য মানুষ ভেলা অর্থাৎ কতকগুলি কাঠের গুড়িকে একসঙ্গে বেঁধে ব্যবহার করত। এছাড়া এইসময় মানুষ চাকার ব্যবহার শেখে এবং স্থলপথে গোরুর গাড়িকে যান হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। তারা গাধা ও উটের পিঠে করে যাতায়াত করত।
১২)
ভাষা- নব্য প্রস্তর যুগের
মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক ও বিনিময় প্রথার ব্যাপকতার ফলে ভাব বিনিময়ের
প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ক্রমে ভাষার উন্নতি ঘটে।
No comments:
Post a Comment