উত্তর
: প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের
মধ্যবর্তী সময়কাল মধ্য প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত হয়। আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ১৫,
০০০ অব্দ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দ
পর্যন্ত মধ্য প্রস্তর যুগ বিস্তৃত ছিল। এই যুগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি
গুলি হল-
১)
হাতিয়ার-
মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ হাতিয়ার তৈরীতে আরও দক্ষতার পরিচয় দেয়। এ যুগের
হাতিয়ারগুলি অপেক্ষাকৃত হালকা, ক্ষুদ্রতর
এবংধারালো মূল পাথরের ওপর আঘাত করে পাথর খণ্ডের কোনাচে অংশ বের করে নেওয়া হত। এই
কোনাচে অংশ পুরাতত্ত্বের ভাষায় 'ক্লেক’ বলে অভিহিত হয়ে
থাকে। এ যুগের মানুষের প্রধান অস্ত্র ছিল তির-ধনুক, হারপুন,
বড়শি প্রভৃতি। হাতিয়ারের ক্ষুদ্র আকারের জন্য এ যুগ কে 'ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগ' নামেও অভিহিত করা হয়।
২) জীবিকা : মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ। বড়ো পশু শিকারের পাশাপাশি তারা লাল হরিণ, বনবিড়াল, নেউল প্রভৃতি পশুও শিকার করত। যারা নদী ও সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করত তারা সেখান থেকে মাছ ও শামুক ইত্যাদি সংগ্রহ করত।
৩)
পশুপালনঃ এই যুগের মানুষ ক্রমশ পশুপালনেও অভ্যস্ত
হয়ে উঠতে শুরু করেছিল নর্মদা উপত্যকায় আদমগড়ের প্রত্নক্ষেত্রতে হরিণ,
সজারু প্রভৃতি নিহত বন্য পশুর দেহের অস্থি পাওয়া যায়। পাশাপাশি
গবাদি পশু, শূকর, কুকুর, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদির অস্থিও পাওয়া গিয়েছে
সেগুলিতে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। এরই ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন যে, এখানকার মানুষ প্রধানত শিকারি হলেও তারা গৃহপালিত পশুর প্রয়োজনীয়তা
উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। পশুর অস্থি যে সংখ্যায় এই অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে
সেগুলি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, শিকারের
উপর নির্ভরশীলতা ক্রমশ হ্রাস পেতে শুরু করেছিল এবং গৃহপালিত পশুর উপর নির্ভরশীলতা
বাড়তে শুরু করে। এও মনে করা হয় যে, শিকার ও পশুপালন
নির্ভর এক মিশ্র আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।
৪)
যানবাহনঃ বরফের ওপর দিয়ে চলার জন্য মধ্যপ্রস্তর
যুগের মানুষ স্লেজগাড়ির ব্যবহারও জানত। এই গাড়ি
অবশ্য কুকুরে টানত। তারা জলপথে যাতায়াতের জন্য গাছের
গুড়ি ব্যবহার করে
নৌকা বানাত।
৫) চিত্রকলাঃ এ যুগের চিত্রকলার বিষয়বস্তু ছিল নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী এবং বিভিন্ন হাতিয়ার। আবার মানুষ ও পশুর চিত্রও পাওয়া গিয়েছে রাশিয়া, ফিনল্যাণ্ড ও সুইডেনের বিভিন্ন প্রাচীন গুহায়।
No comments:
Post a Comment